জন্মদিন উৎসব কিভাবে এলো?



জন্মদিন হচ্ছে পঞ্জিকা অনুযায়ী মানুষের জন্মগ্রহণের দিবস। (জন্মদিন আর জন্মতারিখ কিন্তু এক নয়। জন্মদিন হবে সেটিই যে তারিখটি প্রতিবছর ফিরে আসে )
জন্মের দিনই জন্মদিন আর সেটা ফিরে আসে বছরে একবার।
আবার যাদের লিপইয়ারে মানে ২৯ ফেব্রুয়ারি যাদের জন্ম তাদের কিছুবছর পর পর আসে।


জন্মদিনের ইতিহাস :
খ্রিস্টপূর্ব ৩,০০০ বছর পূর্বে প্রাচীন মিশরে ফ্যারওরা যখন সিংহাসন আহরণ করেন তখন থেকেই মূলত জন্মদিনের অনুষ্ঠান পালিত হয়ে আসতেছে।
লিখিতভাবে এই জন্মদিনের কথা জানা যায় বাইবেলের জেনেসিস অধ্যায় থেকে।

"তৃতীয় দিনটি ছিল ফারাউনের জন্মদিন। ফেরাউন তার সব কর্মকর্তাদের জন্য ভোজের আয়োজন করেন। ফেরাউন তার মদ-পরিবেশক ও রুটি প্রস্তুতকারককে ক্ষমা করে দিলেন”। [ওল্ড টেস্টামেন্ট, জেনেসিসঃ ৪০-২০]"

গ্রীকরাও অনুপ্রাণিত হয়েছিলো আর মিশরীয় এই প্রথা কে তাদের দেবদেবীদের স্মরনে এই প্রথা ব্যাবহার করতে থাকে।


গ্রীকরা চন্দ্রের দেবী আরতেমিস(Artemis)-কে সম্মানস্বরূপ চন্দ্রাকৃতির কেক দিয়ে পূজা করতো।
চন্দ্রদেবী আর্টেমিসের জন্মদিনের কেকে মোমবাতি জ্বালিয়ে কেকটিকে উজ্জ্বল করার বুদ্ধিও গ্রীকদের মাথা থেকেই এসেছিল।

মিশর আর গ্রীকদের বাইরে তেমন জন্মদিন পালনের ইতিহাস খুবই কম ছিলো।
কিন্তু ইতিহাসের জনক হেরোডোটাস উল্লেখ করেন যে,
ধনীরা তাদের জন্মদিনে বেশ বড়সড় ভুড়িভোজের আয়োজন করতো পারস্যে। প্রাচীন ভারত কিংবা চীনে সাধারণ জনগনের জন্মদিনে পালনের তথ্য খুব একটা পাওয়া যায় না।


কিন্তু শ্রীকৃষ্ণ এর জন্মদিন খুব আগে থেকেই পালন করে আসছে হিন্দু ধর্মাবলির মানুষরা।

মূলত তখন শুধুমাত্র ধর্ম গুরু অথবা দেবদেবীদের জন্মদিন পালন করা হতো।

কিন্তু এই প্রথা ভেংগে প্রথম রোমের জনগন, তাদের পরিবার এর সদস্য নিয়ে তাদের জন্মদিন পালন করতে থাকে।

তবে শুরু থেকেই মেয়েরা যা কতটা কুসংস্কার এর কারনে পিছিয়ে থাকতো তা অনুমান করা যায়।
কারন তখনো শুধুই ছেলেদের জন্মদিনই পালন করা হতো।

ইহুদী ও খ্রিস্টানরা প্রথমদিকে জন্মদিন পালনকে শয়তানের রীতি হিসেবে মনে করতো।
তবে খ্রিস্টানদের ধ্যানধারণা পাল্টাতে থাকে চতুর্থ শতাব্দীর পর থেকে। প্রথমদিকে কোনো নিয়ম না থাকলেও চতুর্থ শতাব্দীর পর থেকে যীশুর জন্মদিন পালন শুরু করে খ্রিস্টানরা।




তারা ক্রিসমাস ডে হিসেবে পালন করে আসছে এখনোও!
এখন এটা পৃথিবীর প্রায় সব প্রান্তেই পালন করা হয়।

ইউরোপীয়ানদের হাত ধরে তাদের মতো জন্মদিন পালন ছড়িয়ে পড়তে থাকে পুরো পৃথিবীতে। যেসব সমাজে জন্মদিন পালনে কোনো প্রথা ছিল না তারাও শুরু করে জন্মদিন পালন। তবে জন্মদিন দীর্ঘদিন শুধু ধনীরাই পালন করত।

কেক ও মোমবাতির ব্যাবহার :


অষ্টাদশ শতাব্দীতে জার্মানিতে কেক ও মোমবাতি দিয়ে বাচ্চাদের জন্মদিন পালন শুরু হয়। বাচ্চাদের মোমবাতি দেয়া হতো তাদের যততম জন্মদিন ততোটির থেকে একটি বেশি। এই বেশি মোমবাতিটি দিয়ে তাদের আরো এক বছর আয়ুর আশা করা হতো।

জার্মান বেকারিগুলো তখনকার সময়ে সর্বপ্রথম জন্মদিন উদযাপনের জন্য কেক বানানো শুরু করে।





মোমবাতির ব্যবহার নিয়ে সবচেয়ে পুরাতন স্মৃতি পাওয়া যায় ১৭৪৬ সালে। যখন লুড ভন জিনজেনডরের জন্মদিন খুব ধুমধাম করে পালন করা হয়।অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকা একজন অতিথির ভাষ্যমতে,
“অনুষ্ঠানে কেকটি যথেষ্ট বড় ছিলো, কোনো ওভেনে সেঁকতে পারবে এমন।এবং ব্যক্তির বয়স অনুযায়ী কেকে ছিদ্র করা হয়েছিলো। প্রত্যেকটি ছিদ্রে একটি মোমবাতি গেঁথে দেয়া হয়েছিলো,এবং মাঝখানে ছিলো আরো একটি মোমবাতি।”
প্রায় পঞ্চাশ বছর পর,প্রিন্স অগাস্ট সেক্সে গোথা এলটেনবার্গ তার নিজের জন্মদিনের অনুষ্ঠানের বর্ণনায় বলেন, ” একটি বিশাল কেকে প্রায় ৫০ টি রঙিন, জ্বলন্ত মোমবাতি সাজিয়ে রাখা হয়েছিলো। মোমবাতিগুলো প্রায় গলে যাচ্ছিলো এবং পুড়িয়ে দেয়ার হুমকি দিচ্ছিলো এবং বাড়তি যেসব মোমবাতি ছিলো তা আগামী বছরগুলোর কথা মনে করিয়ে দিচ্ছিলো।”

এসব মন্তব্য গুলো এটাই বুঝায় যে, পুরাতন ঐতিহ্য অনুযায়ী ব্যক্তির বয়সের সমান সংখ্যক মোমবাতি ব্যবহার করা হতো। এছাড়া বাড়তি মোমবাতি যুক্ত করা হতো আগামী বছরের প্রতীক হিসেবে।

বিদ্র: বিভিন্ন বই, ওয়েবসাইট থেকে অনুপ্রাণিত।

Comments

Popular posts from this blog

গ্রাফিতি! গ্রাফিতি কি? গ্রাফিতির ইতিহাস কি?

বীর পুরুষ - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর