গ্রাফিতি! গ্রাফিতি কি? গ্রাফিতির ইতিহাস কি?






গ্রাফিতি" ইটালিয়ান শব্দ "Grafitiato" থেকে আসে, যার অর্থ "খচিত"।

গ্রাফিতি শব্দটি শিলালিপি, চিত্র অঙ্কন এবং এই ধরনের শিল্পব বুজায়। প্রাচীন সমাধি বা ধ্বংসাবশেষের দেয়ালের মধ্যে এইগুলেকে পাওয়া যায়।





গ্রাফিতি হচ্ছে দেয়ালে বা যেকোনো সারফেসে র‍্যান্ডমলি আঁকা কোন চিত্র। সিম্পল কন্টেন্ট থাকবে, সিম্পল আঁকা থাকবে, কিন্তু পেছনের বোধটা থাকবে খুব গভীর। সহজ ভাষায় এটাই গ্রাফিতি।

গ্রাফিতি অনেক,অনেক সময় ধরে হয়ে আসছে । প্রকৃতপক্ষে, সম্ভবত এটি গুহার দেয়ালের প্রথম অঙ্কন করা হয়েছিলো পশুর হাড় দিয়ে খোদাই করে। পশুর হাড় দিয়েই প্রথম গ্রাফিতি আঁকা শুরু হয় বলে ভাবা হয়।

তখন থেকে পরিবর্তন হয়ে আস্তে আস্তে মানুষের বাড়ির অথবা কোনো প্রতিষ্ঠানের  দেয়ালে দেয়ালে, যেখানে মানুষের নজরে আসে এমন জায়গায় গ্রাফিতি  আঁকা শুরু হয়।


প্রাচীন গ্রিক ও রোমানদের সময়কাল থেকে মূলত এই গ্রাফিতির প্রচলন ভালো করে শুরু হয়।

গ্রাফিতির নিদর্শন এখনো আছে প্রাচীন গ্রিক শহর এফিসাস বা বর্তমান তুরস্কে।
মূলত তারা এইগুলিকে ভালোর চোখে দেখতো না।সেখানকার  মানুষদের মতে এগুলো পতিতালয়ের বিজ্ঞাপন জাতীয় কিছু  নিদর্শন।




তারা গ্রাফিতিতে প্রায়ই প্রেম, রাজনৈতিক স্লোগান, এবং সময়ে জনপ্রিয় উদ্ধৃতি প্রকাশ প্রদর্শন করেছিলো।

বর্তমানে মূলত গ্রাফিতি প্রধানত কালার স্প্রে পেইন্ট বা মার্কার কলম দিয়ে আঁকা হয়। এখন বিভিন্ন দেশের তরুনরা মূলত হিপহিপ নিয়ে বেশি গ্রাফিতি আঁকছে।

এই ধরনের চিত্র পৃথিবীর অনেক প্রান্তে পাওয়া গিয়েছে, আর এখনো আঁকা হচ্ছে।

মূলত এই গ্রাফিতি নিয়ে আলোচনা সবচেয়ে বেশি হয়েছিলো ২য় বিশ্বযুদ্ধে।





দ্ব যার নাম ছিল “Kilroy was here” অর্থাৎ কিলরয় এখানে ছিল। একটা টেকো মাথার লম্বা নাকওয়ালা লোক দেয়াল ধরে বসে আছে, সিম্পল এই গ্রাফিতি তখন ছড়িয়ে পড়েছিল এমেরিকার দেয়ালে দেয়ালে। এই সাদামাটা গ্রাফিতি আঁকা আমেরিকান শিপমেন্ট যখন জার্মানদের হাতে ধরা পড়ে, তখন এডলফ হিটলার ভাবলেন এটা নিশ্চয়ই আমেরিকানদের কোন হাই ইন্টেলিজেন্স স্পাইয়ের কোডনেম। অথচ এই কিলরয়ের পেছনের রহস্য কি তা আজও অজানা। এই গ্রাফিতিতে ব্যবহৃত চরিত্রের নাম ছিল মিঃ চ্যাড।




বাংলাদেশে তেমন গ্রাফিতি নিয়ে কোনো মাথাব্যাথাই ছিলো না কারোর।
তবে,
২০১৭ সালের মাঝখানে সবার মাঝে আলোচনায় আসে সুবোধের।

হঠাৎ রাজধানীর আগারগাঁও এবং মিরপুরের কয়েকটি দেয়ালে ‘সুবোধ’-এর গ্রাফিতি বা দেয়ালচিত্র পথচলতি মানুষের নজরে আসে। এই দেয়ালচিত্রগুলোর একমাত্র চরিত্র ‘সুবোধ’ ছিলো। এর সব কটিতে লেখা ছিলো :




‘সুবোধ তুই পালিয়ে যা, এখন সময় পক্ষে না।’





‘সুবোধ তুই পালিয়ে যা, মানুষ ভালোবাসতে ভুলে গেছে।’

‘সুবোধ তুই পালিয়ে যা, তোর ভাগ্যে কিছু নেই’,
কিংবা





‘সুবোধ এখন জেলে, পাপবোধ নিশ্চিন্তে বাস করছে মানুষের মনে’।



আর এই প্রতিটি দেয়ালচিত্রের লোগো আকারে ব্যবহার করা হয়েছে একটি শব্দ: ‘হবেকি’ (HOBEKI?)।


সুবোধ’-এর এই দেয়ালচিত্র অনেক পথচলতি মানুষের আগ্রহের বিষয়ে পরিণত হয়েছিলো। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকেও ছড়িয়ে পড়েছিলো এই চিত্রগুলো।
কিন্তু মজার ব্যাপার হলো এখনো এর সম্পর্কে কেউ কিছু জানে নি।
কে এই সুবোধ?
কারা আঁকলো?
কেন আঁকলো?
তা কিছুই না।
আসলে এই গ্রাফিতি গুলো এমনই হয় বাতাসের উপরে প্রশ্ন ছুড়ে দেয়,
যা মানুষের মনের মধ্যে গিয়ে প্রশ্ন করে।

আবার গ্রাফিতি যে চুরি করে আঁকতে হবে তা নয়,



সম্প্রতি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শামসুন্নাহার হলের সামনে "শামসুন্নাহার হল নির্যাতন" উপলক্ষে ছাত্র ইউনিয়ন এঁকেছে এক ড্রাগন গ্রাফিতি।
যা সবার নজরে আসে অনেক প্রশংসা কুড়ায়।
আবার সুন্দরবন রক্ষায় ও অনেক আন্দোলনে গ্রাফিতির ব্যাবহার দেখা যায়।


গ্রাফিতি কি অপরাধ? :
হ্যা, এক দিক দিয়ে বিবেচনা করলে এইগুলা অপরাধের আওতায় পরে।
কারন কারো দেয়ালে কিছু আঁকা,
কতৃপক্ষের অনুমতি না নিয়ে দেয়াল আঁকা তো অন্যায়ই!




বিভিন্ন ধরনের গ্যাং তাদের অস্তিত্ব  জানান দিতে গ্রাফিতি আঁকে।

গ্রাফিতি কি ভালো? :
হ্যাঁ,  একদিক দিয়ে দেখলে আবার ভালো,অনেক ভালো।
এর মাধ্যমে আমরা সমাজে নারী জাগরন,
অন্যায় অবিচারের যে চিত্র তা ফুটিয়ে মানুষের মাঝে তুলে দিতে পারা যায়।

বিদ্র : বিভিন্ন বই, পত্রিকা, অনলাইন ওয়েবসাইট থেকে অনুপ্রাণিত ও আমার নিজের কিছু লেখা নিয়ে সাজানো এই ব্লগটি।




Comments

Post a Comment

Popular posts from this blog

জন্মদিন উৎসব কিভাবে এলো?

বীর পুরুষ - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর